আপনি কি একটি জমি কিনতে যাচ্ছেন? কিন্তু জমির খতিয়ান সঠিক রয়েছে কিনা সেটি জানেন না? অথবা আপনার নিজস্ব জমির খতিয়ানটি যদি হারিয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে খুব সহজেই অনলাইনে জমির খতিয়ান বের করতে পারবেন। আজকের নিবন্ধনে অনলাইনে জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে পূর্বের মালিকানা এবং খতিয়ান যাচাই করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই আপনি যদি একটি জমি ক্রয় করতে চান তাহলে ক্রোয় এর পূর্বে অবশ্যই জমির মালিকানা যাচাই করে নিবেন। এবং আপনি যেই জমিটি ক্রয় করতে চাচ্ছেন সেই জমিটির খতিয়ান নম্বর ঠিক আছে কিনা সেটি যাচাই করার জন্য দাগ নাম্বার থেকে খতিয়ানটি বের করে নিতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ জমির মালিকানা বের করার উপায়
একটি যমের খতিয়ান কয়েকটি পদ্ধতিতে বের করা যায় যেমন জমির খতিয়ান বের করার জন্য দাগ নাম্বার, খতিয়ান নম্বর, মালিকের নাম, পিতা/স্বামীর নাম দিয়েও জমির খতিয়ান বের করা যায় চলো তাহলে আমরা আজকের এই নিবন্ধনে খতিয়ান বের করার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিব চলুন তাহলে শুরু করা যাক।

অনলাইনে জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম 2023
জমির খতিয়ান বের করার জন্য ভিজিট করুন https://eporcha.gov.bd/ এখানে মেনু থেকে “খতিয়ান” অপশনটি সিলেক্ট করুন। পরবর্তী পেইজে বিভাগ জেলা উপজেলা ও মৌজা সিলেক্ট করে “খতিয়ান টাইপ” নির্বাচন করুন। খতিয়ান নং ও ক্যাপচা কোড লিখে (অনুসন্ধান) বাটনে ক্লিক করলেই খতিয়ান যাচাই করতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ জমির দাগ নম্বর থেকে খতিয়ানটি বের করুন
উপরে আমরা বলেছি জমির খতিয়ান বের করার জন্য খতিয়ান নং ব্যবহার করে জমির খতিয়ান বের করার উপায় তবে খতিয়ান নাম্বার ছাড়াও জমির দাগ নাম্বার, খতিয়ান নম্বর, মালিকের নাম, পিতা/স্বামীর নাম দিয়েও জমির খতিয়ান বের করা যায়।
উপরে আমরা খুবই সংক্ষেপে অনলাইনে জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করেছি চলুন এবার আরও একটু বিস্তারিতভাবে ছবি আকারে চিহ্নিত করে জমির খতিয়ান কিভাবে বের করবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত কয়েকটি স্টেপের মাধ্যমে আলোচনা করব চলুন তাহলে দেখে নেই।
ধাপ ২: বাংলাদেশের ভূমি মন্ত্রণালয় অফিশিয়াল ওয়েবসাইট eporcha সার্চ করুন
দাগ নাম্বার দিয়ে জমির খতিয়ান বের করার জন্য আপনার মোবাইল বা কম্পিউটারের যে কোন ব্রাউজার থেকে বাংলাদেশ ভূমি মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://eporcha.gov.bd/ লিখে সার্চ করলে নিচে দেওয়া ফটোর মতন একটি ইন্টারফেস দেখতে পাবেন এবং ই-পর্চা অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন।
ধাপ ২: খতিয়ান অপশন সিলেক্ট করুন
eporcha অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে যাওয়ার পরে নতুন একটি ইন্টারফেস দেখতে পাবেন। এখানে একটু নিচের দিকে গেলে একটি মেনু দেখতে পাবেন সেখান থেকে (খতিয়ান) অপশন সিলেক্ট করুন। যেমনটি নিচের ফটোতে দেখতে পাচ্ছেন।
ধাপ ৩: খতিয়ান নং দিয়ে খতিয়ান দেখুন
এই স্টেপে আপনার জমির সকল তথ্য দিতে হবে প্রথমে বিভাগ ও জেলা নির্বাচন করুন খতিয়ান টাইপ নির্বাচন করুন। মোট আট ধরনের খতিয়ান প্রচারিত রয়েছে আপনি এর জমি যাচাই করতে চাচ্ছেন বা যেই খতিয়ান যাচাই করতে চাচ্ছেন সেটি সিলেক্ট করুন।
- বি এস
- সি এস
- বি আর এস
- আর এস
- এস এ
- পেটি
- দিয়ারা
- নামজারি
উপরের খতিয়ান টাইপ গুলোর মধ্যে আপনি যেই খতিয়ানের জায়গার তথ্য দেখতে চাচ্ছেন বা কার নামে রয়েছে সেটি দেখতে যাচ্ছেন সেই খতিয়ান টাইপ সিলেক্ট করুন বেশিরভাগ আরএস খতিয়ান হয়ে থাকে তাই আমরা আর এস খতিয়ান সিলেক্ট করে কিভাবে চেক করব সেটি দেখব।
খতিয়ান (আর এস) সিলেট করে উপজেলা ও আপনি যেই মৌজার জায়গা বা খতিয়ান দেখতে চাচ্ছেন সেই মৌজা নির্বাচন করুন। এবং দাগ নম্বর লিখে নিচে একটি ক্যাপচার বক্স দেখতে পাবেন সেখানে চারটি সংখ্যা লেখা দেখতে পাবেন সেই লেখাগুলো খালি বক্সে বসিয়ে (অনুসন্ধান করুন) বাটনে ক্লিক করলেই নতুন একটি ইন্টারফেজে নিয়ে যাবে।
ধাপ ৪: খতিয়ান সার্টিফাইড কপি যাচাই করুন
সেখানে আপনি যে খতিয়ান নং ব্যবহার করেছেন এবং সেই খতিয়ান নং অনুযায়ী আপনার খতিয়ান নাম্বার কত সেটি এবং জমির মালিক ও দখলদারকে সেটিও দেখতে পারবেন যেমনটি নিজের ফটোতে দেখানো হয়েছে। এবার সার্টিফাইড কপি দেখার জন্য আবেদন করতে হবে।
সার্টিফাইড কপি আবেদন করার জন্য নিচে (আবেদন করুন) বাটনে ক্লিক করুন
ধাপ ৫: সার্টিফাইড কপির ফি প্রদান করুন
অনলাইন থেকে সার্টিফাইড কপি ডাউনলোড করার জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি প্রদান করতে হবে। তবে আপনি যদি আরএস খতিয়ান যাচাই করতে চান তাহলে আপনি ফ্রিতেই আরএস খতিয়ান ডাউনলোড করতে পারবেন তবে অন্যান্য খতিয়ান গুলো ডাউনলোড করার জন্য অবশ্যই ফি প্রদান করতে হবে।
এই স্টেপে সার্টিফাইড কপি ডাউনলোড করার জন্য কিছু তথ্য প্রদান করতে হবে যেমন আপনার নাম ভোটার আইডি কার্ড নাম্বার, জন্ম তারিখ, মোবাইল নাম্বার, ঠিকানা, ইত্যাদি।
এখানে দুটি অপশন পাবেন প্রথমদিকে একটি হচ্ছে অনলাইন কপি এবং আরেকটি হচ্ছে সার্টিফাইড কপি আপনি যদি এখান থেকে অনলাইন কপি ডাউনলোড করতে চান তাহলে আপনাকে কোন এক্সট্রা ফ্রি প্রদান করতে হবে না।
তবে সার্টিফাইড কপি ডাউনলোড করার জন্য অবশ্যই নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি 50 টাকা প্রদান করতে হবে। তাই আপনি কপি ডাউনলোড করার আগে প্রথমেই নির্বাচন করে নিবেন অনলাইন কপি ডাউনলোড করবেন নাকি সার্টিফিকেট কপি ডাউনলোড করবেন।
ধাপ ৬: খতিয়ান কপি ডাউনলোড করুন
উপরের ফর্মে ব্যক্তিগত সকল তথ্য এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি প্রদান করার পর আপনাকে এটি অনলাইন কপি অথবা সার্টিফাইড কপি দেওয়া হবে আপনি খুব সহজেই এটি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। আপনি যদি খতিয়ান অনলাইন ডাউনলোড করেন তাহলে অনলাইন কপিতে উপরে লেখা থাকবে অনলাইন কপি সার্টিফাইড কপি হিসেবে ব্যবহারের যোগ্য নয়।
খতিয়ান বের করার নিয়ম ২০২৩
খতিয়ান যাচাই বা খতিয়ান বের করার দুটি পদ্ধতি রয়েছে। ১/ ডিজিটাল পদ্ধতি, ২/ ম্যানুয়াল পদ্ধতি। ডিজিটাল পদ্ধতিতে আবার দুই ধরনের খতিয়ান বের করতে পারবেন ১/ খতিয়ান অনলাইন কপি, ২/ খতিয়ান সার্টিফাইড কপি। তবে সার্টিফিকেট কপির জন্য অবশ্যই আবেদন করতে হবে।
ডিজিটাল পদ্ধতিতে খতিয়ান বের করার জন্য ভিজিট করুন https://eporcha.gov.bd/ এখানে মেনু থেকে “খতিয়ান” অপশনটি সিলেক্ট করুন। পরবর্তী পেইজে বিভাগ জেলা উপজেলা ও মৌজা সিলেক্ট করে “খতিয়ান টাইপ” নির্বাচন করুন। খতিয়ান নং ও ক্যাপচা কোড লিখে (অনুসন্ধান) বাটনে ক্লিক এবং আবেদন সম্পন্ন করুন।
অনলাইন কপির আবেদন করার সময় দুটি অপশন নির্বাচন করতে পারবেন ১/ খতিয়ান অনলাইন কপি, ২/ খতিয়ান সার্টিফাইড কপি। খতিয়ান অনলাইন কপি ডাউনলোড কতে কোন ফি প্রদান করতে হবে না। তবে খতিয়ান সার্টিফাইড কপি ডাউনলোড করার জন্য অবশ্যই ৫০ (পঞ্চাশ) টাকা অনলাইন ফি প্রদান করতে হবে।
খতিয়ান উঠানোর ম্যানুয়াল পদ্ধতি হচ্ছে – খতিয়ান নাম্বার বা জমির দাগ নাম্বার নিয়ে সেটেলমেন্ট অফিসে যোগাযোগ করে খতিয়ান উঠানো। সেটেলমেন্ট অফিস থেকে খতিয়ান উঠাতে ১০০ (একশত) টাকা খরচ হয়।
সি এস খতিয়ান বের করার নিয়ম ২০২৩
আমরা প্রথমেই বলে এসেছি খতিয়ানের কয়েকটি ধরন হয়ে থাকে এর মধ্যে সি এস খতিয়ান একটি খতিয়ানের ধরন তাই আপনি যদি সিএস খতিয়ান বের করতে চান তাহলে আমাদের আজকের নিবন্ধনে দেখানোর নিয়ম অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
জমির সি এস খতিয়ান বের করার ভিজিট করুন https://eporcha.gov.bd/ এখানে মেনু থেকে “খতিয়ান” অপশনটি সিলেক্ট করুন। পরবর্তী পেইজে বিভাগ জেলা উপজেলা ও মৌজা সিলেক্ট করে “খতিয়ান টাইপ” (সি এস) নির্বাচন করুন। খতিয়ান নং ও ক্যাপচা কোড লিখে (অনুসন্ধান) বাটনে ক্লিক করলেই সি এস খতিয়ান যাচাই করতে পারবেন।
rs খতিয়ান বের করার নিয়ম 2023
জমির rs খতিয়ান বের করার খতিয়ান বের করার জন্য ভিজিট করুন eporcha.gov.bd এখানে বিভাগ জেলা উপজেলা ও মৌজা সিলেক্ট করে “খতিয়ান টাইপ” আর এস (RS) নির্বাচন করুন। খতিয়ান নং ও ক্যাপচা কোড লিখে (অনুসন্ধান) বাটনে ক্লিক করলেই আর এস (RS) খতিয়ান যাচাই করতে পারবেন।
আমরা বিস্তারিতভাবে উপরের দিকে বলেছি কিভাবে সকল খতিয়ান যাচাই করবেন এবং সার্টিফাইড কপির জন্য আবেদন করবেন এখানে যে নিয়ম দেখানো হয়েছে এই নিয়মের সাথে উপরে নিয়মগুলো মিলিয়ে আরএস খতিয়ান বের করতে পারবেন।
বি এস খতিয়ান বের করার নিয়ম ২০২৩
জমির কতগুলো খতিয়ান টাইপের মধ্যে বি এস খতিয়ান একটি তবে বিএস খতিয়ান এর জায়গা একটু কম হয়ে থাকে সবচেয়ে বেশি আরএস খতিয়ানে জায়গা বেশি হয় তবে আপনি যদি বিএস খতিয়ান বের করতে চান তাহলে।
জমির বি এস খতিয়ান বের করার ভিজিট করুন https://eporcha.gov.bd/ এখানে মেনু থেকে “খতিয়ান” অপশনটি সিলেক্ট করুন। পরবর্তী পেইজে “খতিয়ান টাইপ” (বি এস) নির্বাচন করুন। বিভাগ জেলা উপজেলা ও মৌজা সিলেক্ট করে খতিয়ান নং ও ক্যাপচা কোড লিখে (অনুসন্ধান করুন) বাটনে ক্লিক করলেই সি এস খতিয়ান যাচাই করতে পারবেন।
sa খতিয়ান বের করার নিয়ম 2023
জমির এস এ (SA) খতিয়ান বের করার ভিজিট করুন eporcha.gov.bd এখানে মেনু থেকে “খতিয়ান” অপশনটি সিলেক্ট করুন। পরবর্তী পেইজে খতিয়ানের ধরন” এস এ (SA) নির্বাচন করুন। বিভাগ জেলা উপজেলা ও মৌজা সিলেক্ট করে খতিয়ান নং ও ক্যাপচা কোড লিখে (অনুসন্ধান) বাটনে ক্লিক করলেই এস এ (SA) খতিয়ান যাচাই করতে পারবেন।
খতিয়ান বের করার নিয়ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন উত্তর (FAQ)
খতিয়ান কিভাবে বের করবো?
২ টি পদ্ধতিতে খতিয়ান বের করা যায়। খতিয়ানের অনলাইন কপি এবং ডাক যোগে খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি। জমির খতিয়ান উঠানোর মেনুয়াল পদ্ধতি হচ্ছে- খতিয়ান নাম্বার বা জমির দাগ নাম্বার নিয়ে সেটেলমেন্ট অফিসে যোগাযোগ করে খতিয়ান তোলা। সেটেলমেন্ট থেকে খতিয়ান উঠাতে ১০০ (একশত) টাকা খরচ হয়। আর অনলাইনে সার্টিফাইড খতিয়ান উঠাতে ৫০ টাকা খরচ লাগবে।
আর এস খোতিয়ান কি?
CS রেকর্ড সংশোধনের জন্য আর এস RS খাতিয়ান বা রিভিশনাল জরিপ করা হয়েছিল। এটি চট্টগ্রাম জেলায় প্রথম শুরু হয়েছিল এবং এই জরিপের উদ্দেশ্য ছিলো জমির পরিমাণ, মালিকের নাম এবং মালিকের নাম আপডেট করা। যা বি এস, সি এস খতিয়ানের চেয়েও বেশি প্রামাণিক ও শক্তিশালী করে তুলেছে।
শেষ কথা
সম্মানিত পাঠক বৃন্দ আমাদের আজকের নিবন্ধনে অনলাইনে জমির খতিয়ান বের করার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে আশা করি আপনাদের সম্পূর্ণ ক্লিয়ারলি এবং খুবই সাধারণ ভাবে বোঝাতে পেরেছি কিভাবে জমির খতিয়ান বের করতে হয়।
এরপরেও যদি না বুঝে থাকেন তাহলে অবশ্যই আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন আমরা আপনি যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন সেই সমস্যাটির যথাসাধ্য সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করব। জমি সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য জানতে Tech Bongo 24 ওয়েব পোর্টাল প্রতিনিয়ত ভিজিট করুন এখানে আমরা জমি সংক্রান্ত সহ ভোটার আইডি কার্ড জন্ম নিবন্ধন সহ আরো নানা ধরনের তথ্য শেয়ার করে থাকি।